মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন
আক্তার হোসেন ভূইয়া,মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি, কালের খবর : মামুন নামের প্রবাস ফেরত এক যুবকের রহস্য জনক মৃত্যু হয়েছে। মামুনের স্ত্রী আছমা বেগম ঢাকায় বলেছে স্ট্রোক আর গ্রামের বাড়িতে এসে বলছে তার স্বামী ফাঁসি দিয়ে মারা গেছে। তার এমন টাল-বাহানা কথাবার্তায় এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মৃত যুবক কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পূর্বধৈইর পশ্চিম ইউনিয়নের হাটাশ গ্রামের মৃত আবু তাহেরের ছেলে। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের মাতম বইছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরিবারের চাকা সচল করতে ২০০৯ সালে মামুন মিয়া সৌদি আরবে পারি জমান। এর মধ্যে ৬ বছর আগে তিনি একবার বাড়িতে আসেন এবং ছুটি কাটিয়ে আবার প্রবাসে চলে যান। নিজের সুখের কথা না ভেবে, স্ত্রী সন্তানদের কথা চিন্তা করে প্রবাস জিবনের কষ্টার্জিত টাকা তার স্ত্রীর কাছে পাঠান। দীর্ঘ দিন সৌদি আরবে থাকার পর গত ০৫-০৬-২২ ইং তারিখে তিনি দেশে আসেন। দেশে এসে তার গ্রামের বাড়িতে না এসে সে ঢাকাস্থ উত্তরখান থানাধীন, চাঁনপাড়া মেডিকেল রোডে মাতৃছায়া নামক ৫ তলা বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় তার স্ত্রীর ভাড়া বাসায় উঠেন। (উল্লেক্ষ্য প্রায় ২ বছর ধরে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ওই ভাড়া বাসায় বসবাস করছে)। গত ০৬-০৬-২২ ইং তারিখ সোমবার রাত সাড়ে ১১ ঘটিকার সময় আছমার বোন কুলসুম বেগম তার বোনের জামাই মামুন মিয়া স্ট্রোক করেছে বলে উপর তলার ভাড়াটিয়াদের ডেকে আনেন এবং সে সময় এলাকার সকল লোকজনদের মামুনের স্ত্রী আছমা বেগম তার স্বামী স্ট্রোক করেছে বলে জানায়। আশপাশের লোক জন এসে তাকে উত্তরা আব্দুল্লাপুর আইচি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কতর্বব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
চার তলার ভাড়াটিয়া সাইফুজ্জামান মিঠুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে সে জানায়, ঘটনার দিন রাত প্রায় পোনে ১২টার সময় কুলসুমের ডাকে সাড়াদিয়ে আমি আছমার বাসায় যাই, গিয়ে দেখি আছমার স্বামী মামুনের মাথায় পানি দিচ্ছে। মামুনের কি হয়েছে জানতে চাইলে তার স্ত্রী আছমা বেগম স্ট্রোক করেছে বলে জানায়। পরে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালের কতর্বব্যরত ডাক্তার তাকে মারাগেছে বলে জানালে মামুনের মৃতদেহ এ্যাম্বোলেন্সে করে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাই।
বাড়ির মালিক ওহাব গাজীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, করোনার সময় থেকে আছমা আমাদের বাসায় ভাড়া থাকে। তার স্বামী মামুনের সাথে আমার কোনো পরিচয় নেই। ঘটনার দিন আছমার মেয়ে মুন্নি আক্তার এসে তার বাবা অসুস্থ্য হয়ে পরেছে বলে জানালে, নিচতলায় গিয়ে কি হয়েছে জানতে চাইলে আছমা বেগম বলে তার স্বামী স্ট্রোক করেছে।
মৃত মামুনের মা মালেকা বেগম বলেন, আমার পোলা মরে নাই আছমায় আমার পোলারে মাইরা লাইছে। আমার পোলার বৌ আছমার চাল চলন বালানা। গ্রামে থাকতেও তাই নানা অপকর্ম করত। আমরা বাধা দেই দেইখা তাই ঢাহা গিয়া বাসা লইছে। তাইর মনে এমন কুভাব আছে জানলে পুলারে আমি আমার কাছে নিয়া আইতাম । তাই পইলা কইছে আমার পোলা স্ট্রোক করছে, অহন কইতাছে ফাঁসি দিছে। এমন বার ঢংগের কথা আমি বিশ্বাস করিনা, তাই আমার পুলারে মাইরালাইছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চাই।
মৃত মামুনের স্ত্রী আছমা বেগম বলেন, আমি আমার স্বামীকে নিয়ে রুটি খাইতেছিলাম, হঠাৎ স্বামীর ফোন আসায়, কথা বলতে বলতে সে বারান্দায় চলে যায়। তার আসতে দেরি হওয়ায় আমি গিয়ে বারান্দার দরজা খুলে দেখি সে ফাঁসিতে ঝুলে আছে। ঢাকায় বলেছেন স্ট্রোক এখন বলছেন ফাঁসি এমন দুই রকমের কথা কেনো বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার হিতাহিত জ্ঞান ছিলোনা তাই এমনটি বলেছি।
হাটাশ গ্রামের সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার ফেরদৌসি আক্তার বলেন, নৈরপাড় গ্রামের আল-আমিন মামুনের স্ত্রী আছমাকে ফুসলিয়ে ঢাকায় বাসা ভাড়া করে দেয়। তারা একি বিল্ডিংয়ের, আল-আমিন ৪ তলায় এবং আছমা আক্তার নীচতলায় ভাড়া থাকেন। তাদের মধ্যে পরকিয়ার সম্পর্ক আছে কিনা তা প্রশাসনকে খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করছি।
এলাকা বাসি বলেন, মামুন খুব নম্র, ভদ্র ও ভালো ছেলে ছিলো। তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। মামুনের মৃত্যুটি রহস্য জনক, তার মৃত্যু স্ট্রোক না ফাঁসি, নাকি সবই সাজানো নাটক বুঝে উঠতে পাচ্ছিনা। সকল রহস্যের জট খুলতে মামুনের স্ত্রীকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের দাবিও করেন কেউ কেউ। অনেকের ভাষ্য মতে, তার স্ত্রী কিছু একটা লোকাচ্ছে। সে বিভিন্ন্ সময় বিভিন্ন কথা বলছে। একবার বলছে স্ট্রোক করে,আরেকবার বলছে ফাঁসি দিয়ে মারা গেছে।
বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, মামুনের লাশ ঢাকা থেকে হাটাশ গ্রামে নিয়ে আসলে তার গলায় ও শরীলে দাগ দেখে সন্দেহ হলে এলাকাবাসি থানায় খবর দেয়। আমি র্ফোস পাঠিয়ে সুরতহাল পূর্বক মামুনের লাশ ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকের কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ঘটনা যেহেতু উত্তর খান থানায় সেহেতু আমি ঐ থানায় একটি বেতার বার্তা পাঠিয়েছি এবং বাঙ্গরা বাজার থানায় এ ব্যপারে একটি সাধারন ডাইরী হয়েছে।
উত্তরখান থানার ওসি মো: আব্দুল মজিদ বলেন, এ ঘটনায় আমার থানায় একটি মামলা হয়েছে। আছমা এবং তার বোন কুলসুমকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছি এবং সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসবে সঠিক তথ্য।